ডাকাতি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি এবং কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা রোধে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন র্যাব-৭ চট্টগ্রাম।
দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাষ্ট পেট্রোলিং ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোষ্ট স্থাপন প্রসংগে বলতে গিয়ে RAB -7 চট্টগ্রাম এ কথা বলেন। বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে অবিরাম।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর নিয়িমিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও গত এক মাস যাবৎ র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর এর নির্দেশনা মোতাবেক র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাষ্ট পেট্রোলিং এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং নিম্নবর্ণিত অপরাধ সমূহ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকান্ড একটি আলোচিত বিষয় এবং ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। অল্প বয়সী কিশোরেরাই এই সব গ্যাং বা গ্রুপের সদস্য। তারা পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের সংঘবন্ধ করে। নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে গিয়ে এই সব গ্রুপের সদস্যরা ঝগড়া, মারামারি দিয়ে শুরু করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সন্ত্রাস, মাদক, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ইদানিং কিশোর গ্যাং অপরাধের সংখ্যা আশঙ্খাজনকভাবে বেড়ে গেছে। তাদের যে কোন কাজ সমাজের মানুষের জন্য যেন কোন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর গোয়েন্দা নজরধারী অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ৫০টি’র অধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে।
গত ছয় মাসে ৮-১০টি কিশোর গ্যাংয়ের মোট ৩৩ জন সদস্যকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যা কিছু কিছু এলাকায় অতি সামান্য ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি, মারামারি এমনকি হত্যার ঘটনা ঘটছে যা অত্যান্ত দুঃখজনক। এগুলোর পিছনে রয়েছে আধিপাত্য বিস্তার সহসব ব্যাপারে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম দ্রুত অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতেও আসবে অঙ্গীকার বদ্ধ।
বক্তব্য অতিসম্প্রতি চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ডাবল মার্ডার, পতেঙ্গায় পান বিক্রেতাকে হত্যা, আনোয়ারা থানায় কলা পাতা নিয়ে ঝগড়া করে হত্যা, রাঙ্গুনিয়া থানায় এনজিও কর্মী কল্পনা চাকমাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, আনোয়ারা থানায় পাওনাদারকে আটকে রেখে হত্যা এবং এসব নৃশংস ঘটনায় মূল হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব-৭।
মাদক র্যাব-৭ কর্তৃক বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের ফলে মাদকের বৃহৎ চালান উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে এবং মাদক সরবরাহ অনেক নিম্নপর্যায়ে আসলেও কিছু কিছু খুচরা মাদক কারবারী শহরের নির্জন ও পরিত্যাক্ত স্থান বা এলাকায় মাদক কেনা-বেচা করছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর ফিরিঙ্গি বাজার, বাকলিয়া, অলংকার, হালিশহর, পতেঙ্গাসহ শহরের ভিতরে এবং বাহিরে অনেক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক ব্যবসা করছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গত ছয় মাসে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার পিস ইয়াবা, ২ হাজার ২ শত কেজি গাঁজাসহ বিপুল পরিমান দেশি এবং বিদেশি মদ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামে এ শহরে মানুষজন অনেক রাত পর্যন্ত ব্যবসা-বানিজ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে চলাচল করে। রাত ১১ টার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ব বেশি হয়। ছিনতাইকালে ভিকটিম সামান্য বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা ভিকটিমকে ধারালো অস্ত্রদ্বারা গুরুত্বর আঘাত এবং অনেক ক্ষেত্রে হত্যার ঘটনাও ঘটছে।
র্যাব-৭ গত ছয় মাসে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা হতে অর্ধশতাধিক ছিনতাইকারীকে হাতে নাতে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
ইভটিজিং সাম্প্রতিক সময়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এবং রাস্তা-ঘাট, শপিং মলে বিভিন্ন বয়সী নারীদের উত্ত্যক্ত বা ইভটিজিং এর ঘটনা ঘটছে অহরহ। এটা একটি সামাজিক ব্যাধি। নারীদের প্রতি অশালীন উক্তি করা, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রভৃতি ইভটিজিংয়ের অন্তর্ভূক্ত। এটা নারীদের নিরাপত্তায় মারাত্মক হুমকিস্বরুপ। যা সমাজে শান্তি বিনষ্ট করে। সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এসকল ইভটিজিং এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও ইভটিজিং প্রতিরোধে রোবাষ্ট পেট্রোলিং পরিচালনা করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং বাঁশখালী সড়কে ডাকাতির ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার প্রেক্ষিতে মহাসড়কে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি রোবাষ্ট পেট্রোলিং করায় যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, মিনিবাসে ডাকাতির ঘটনা রোধ সম্ভব হয়েছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকা হতে গত ছয় মাসে ৬৬ জন ডাকাতকে ৮৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমান সময়ে চাঁদাবাজিতে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে, চাঁদাবাজরা সরাসরি চাঁদা নেওয়ার পরিবর্তে তাদের নির্দিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও জনসাধারণকে উচ্চ মূল্যে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে বাধ্য করছে। সেটাও আমরা নজরদারীতে নিয়ে আসছি এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
গুজব ইদানিং পরিলক্ষিত হচ্ছে ব্যাপকহারে কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু স্বার্থন্বেষী মহল অসত্য, মিথ্যা, বানোয়াটভাবে তথ্য উপস্থাপন করে গুজব সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এই গুজব দেশে নৈরাজ্য ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করে। আমরা রোবাষ্ট পেট্রোলিং এর মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের তথ্য নিচ্ছি।
RAB -7 চট্টগ্রাম এর পক্ষ থেকে সাংবাদিক এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর সচেতন নাগরিকদের আহবান- আপনার এলাকার অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম’কে তথ্য দিয়ে অত্র অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অনুরোধ জানিয়েন।