সারাদেশে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু।

বজ্রপাতে দেশের ৭ জেলায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ে প্রেস রিলিজ দিয়েছেন

সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম।সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মোল্লা।

প্রেস রিলিজের তথ্য  অনুযায়ী   কুমিল্লায় ৪ জন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন, সুনামগঞ্জে ৩ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, নোয়াখালীতে ১ জন, নেত্রকোনায় ১ জন, মৌলভীবাজারে ১ জন, চাঁদপুরে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার এসব জেলায় ঘটে যাওয়া বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গত রোববার নেত্রকোনায় কলমাকান্দায় ১ জন এবং নোয়াখালীর সদর উপজেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে বজ্রপাতে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনটির সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশার মানবজমিনকে বলেন, বজ্রপাতে মারা যাওয়াদের বেশির ভাগই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত লোকজন। তারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার হন। আসলে বজ্রপাত ঠেকানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে সচেতনতার মাধ্যমে বজ্রপাতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান কমানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ পাঁচ দফা দাবির কথা জানান। এগুলো হলো- বজ্রপাতে সচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যপুস্তকে বজ্রপাত সচেতনতার অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা, বর্তমানে ৩০ মিনিট আগেই বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানা যায়, দ্রুত প্রাপ্ত পূর্বাভাস হাওরাঞ্চল সহ দেশের সব জেলা-উপজেলায় প্রচারের ব্যবস্থা করা। কৃষকসহ সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও প্রক্ষিক্ষণের ব্যবস্থা করা। মাঠে মাঠে শেল্টার সেন্টার স্থাপন ও আহতদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ সব যাবতীয় খরচ বহন করার কথা বলেন।

বজ্রপাতে হতাহতের বিস্তারিত তথ্য
কুমিল্লায় ৪ জন: কুমিল্লার দুই উপজেলায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে জেলার বরুড়া ও মুরাদনগর উপজেলায় পৃথক দুইটি ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কোরবানপুর পূর্ব পাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেনÑ উপজেলার দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূইয়ার ছেলে জুয়েল ভূইয়া (৩৫) ও কোরবানপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া (কালীবাড়ি) এলাকার মৃত বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬০)। এদিকে দুপুরের দিকে বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগুচ্ছ গ্রামে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেনÑ ওই এলাকার মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং একই এলাকার আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুজনই উপজেলার বড় হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। হালকা মেঘলা আবহাওয়ায় তারা মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। আকস্মিক বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। হঠাৎ এই মর্মান্তিক ঘটনায় দুই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
কিশোরগঞ্জে ৩ জন: কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় এক নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অষ্টগ্রামে ইন্দ্রজিত দাস (৩০) ও স্বাধীন মিয়া (১৪) নামে দুইজন এবং মিঠামইনে ফুলেছা বেগম (৬০) নামে একজন নারী নিহত হয়েছেন। অষ্টগ্রামে হাওরে বোরো ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ইন্দ্রজিত দাস ও স্বাধীন মিয়া নিহত হয়। অন্যদিকে মিঠামইনে বাড়ির পাশে ধানের খলায় কাজ করার সময় ফুলেছা বেগম নিহত হন। সোমবার সকালে বজ্রপাতে এসব প্রাণহানির ঘটনাটি ঘটে। নিহতদের মধ্যে ইন্দ্রজিত দাস অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ্র দাসের ছেলে, স্বাধীন মিয়া একই উপজেলার খয়েরপুর আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিছ মিয়ার ছেলে এবং ফুলেছা বেগম মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ গ্রামের মৃত আশ্রাব আলীর স্ত্রী।
সুনামগঞ্জে ৩ জন: সুনামগঞ্জের শাল্লা ও দোয়ারাবাজার বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দোয়ারাবাজারেই বজ্রপাতে দুইজন নিহত হয়েছেন। উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের নরসিংপুর গ্রামের আক্কেল আলীর ছেলে মাছুম মিয়া (২০) ও একই গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে কায়েস মিয়া (২১) বজ্রপাতে মারা যান। সোমবার এ ঘটনা ঘটে। দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, তারা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতের শিকার হন তারা। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। বজ্রপাতে আহত হন একই গ্রামের রুবেল মিয়া (২২)। এছাড়া, সুনামগঞ্জের শাল্লায় হাওরে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িজাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনা ঘটে। রিমন তালুকদার (২০) শাল্লা উপজেলার ১নং আটগাও ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জাহেদ মিয়ার ছেলে, সে শাল্লা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে শাল্লার বুড়িজাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায় রিমন। এসময় হঠাৎ বৃষ্টিপাত শুরু হলে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগেই বজ্রপাতে রিমন তালুকদার ও তার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া একটি গরুর মৃত্যু হয়।
নেত্রকোনায় ১ জন: নেত্রকোনার মদনে বজ্রপাতেই আরাফাত (১০) নামের এক মাদ্রাসার ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। আরাফাত উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামের মো. আব্দুস ছালাম মিয়ার একমাত্র ছেলে। জানা গেছে, আরাফাত বাড়ির পাশের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। সোমবার ফজরের নামাজের পর নিজ বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে বজ্রপাতের ঘটনার স্বীকার হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
হবিগঞ্জে ১ জন: বানিয়াচং উপজেলায় হাওরে ধান কাটতে গিয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বজ্রপাতের আঘাতে ৩ জন আহত হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় আহত দুই কৃষককে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বেলা ১টার দিকে বানিয়াচং ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের পূবের হাওরে। জানা যায়, একই পরিবারের আপন ৩ ভাই দুরবাশা, ভূষণ দাশ ও সুধন্য দাশ সকালে বাড়ী থেকে ধান কাটার জন্য পুবের হাওরে অবস্থান করছিলেন। এসময় আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দুরবাশা (৩৫)। গুরুতর আহক অপর দুই ভাই।
মৌলভীবাজারে ১ জন: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামে এক চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সোমবার মাখন রবি দাস শ্রীধরপুর গ্রামের আলমাছ মিয়ার জমির ধান চুক্তিতে কেটে দিচ্ছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাখন মারা যান।
চাঁদপুরে ১ জন: চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতের বিকট শব্দে বিশাখা রানী (৩৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। বেলা ১১টায় উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের নাহারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিশাখা ওই এলাকার কৃষক হরিপদ সরকারের স্ত্রী। কচুয়া থানার ওসি আজিজুল ইসলাম জানান, বাড়ির পাশে স্বামী–স্ত্রী মিলে নিজ জমি থেকে ধান তুলছিলেন। এ সময় কাছাকাছি কোথাও বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়। এ সময় বিশাখা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নোয়াখালীতে ১ জন: নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা মহব্বতপুর গ্রামের মাঠে কৃষিকাজ করার সময় বজ্রপাতে কৃষক আব্দুর রহমান (৫০) মারা গেছেন। একই সময় ও একই এলাকার আবু তাহের (৫৫) নামের আরও এক কৃষক আহত হন। সোনাইমুড়ী থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার জানান, দুপুর ১টার দিকে বজ্রপাতের এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়া, গতকাল রোববার নোয়াখালীর সদর উপজেলায় বজ্রপাতে নুরুল আমিন কালা (৪২) নামে একব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বেলা পৌঁনে ১২ টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াল এলাকার দালালবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে, নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় বজ্রপাতে দিদারুল ইসলাম নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। রাত সোয়া ১০টার দিকে উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।