পঞ্চগড়ে পুলিশের সহায়তায়  এক  প্রতিবন্ধী নারী ফিরে পেল স্বামীর সংসার। 

পঞ্চগড়ে পুলিশের সহায়তায়  এক  শারীরিক প্রতিবন্ধী,নির্যাতিত নারী পূণরায় ফিরে পেলেন  স্বামীর সংসার।
গত ১৮ জানুয়ারী নিভৃত পল্লী অঞ্চলে হাড়কাঁপানো তীব্র শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন  সকালে যথারীতি উপস্হিত হয়ে  অফিস কক্ষে প্রবেশ করলেন,  পঞ্চগড় আটোয়ারী থানার  অফিসার ইনচার্জ, এবং তিনি প্রতিদিনের ন্যায় দিনের  যাবতীয় কার্যক্রম তদারকি করছিলেন। বেলা  অনুমানিক ২.৩০ টার সময় উপস্হিত অফিসার-ফোর্সদের সাথে গভীর  রাতে চুরি প্রতিরোধ ও মাদক নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে অফিসার ফোর্সদের সাথে  দিকনির্দেশনা প্রদান করছিলেন। হঠাৎ সেই সময়  একজন গ্রামীণ সাদাসিধে প্রতিবন্ধী  পল্লী বধু  অফিসার ইনচার্জকে সালাম দিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করেন।

কিন্তু অফিসার ইনচার্জ  উনার কথা বুঝতে না পারায়, মনোযোগ দিয়ে গ্রামীন বধুটির কথা বুঝার  চেষ্টা করে।এবং ততক্ষণে তিনি  বুঝেও নেন  সে  শারীরিক প্রতিবন্ধী!তাৎক্ষণিকভাবে থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এসআই রাশেদুজ্জামান, এএসআই রহিমা খাতুন সহ নারী পুলিশ সদস্য ববিতা খতুনদের সহায়তায় ধীরে-সুস্হে বুঝিয়ে শুনিয়ে প্রতিবন্ধী নির্যাতিত নারীর বক্তব্য শ্রবণ করার চেষ্টা  করেন।

বধুটির প্রতিবন্ধী ভাষায় জানা যায় যে, তিনি ছোটবেলা থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং হতদরিদ্র অসহায় দিনমজুর পিতা-মাতার সন্তান।  অল্পবয়সে পার্শ্ববর্তী গ্রামের জনৈক ব্যক্তির সহিত বিয়ে হয় এবং বিয়ের পর দুটি ফুটফুটে সন্তানের মা হন তিনি।  ছেলের বয়স ৮ বছর এবং মেয়ের বয়স ৬ বছর। স্বামীর সন্তান নিয়ে  সুখেই চলছিল তার সংসার। হঠাৎ করেই অভাব অনটন আর স্ত্রীর প্রতিবন্ধি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ট্রলিচালক স্বামী, স্ত্রীকে অপছন্দ করতে শুরু করে ! এবং  শুরু থেকে  পারিবারিক কলহ ও শারীরিক মানসিক নির্যাতন! দিন দিন  নির্যাতনে মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় -ভাগ্যের বিড়ম্বনায় আশ্রয় নেয় হতদরিদ্র দিনমজুর পিতার জীর্ণ-শীর্ণ কুঠিরে। কিন্ত নিয়তির নির্মম পরিহাস সেখানেও  সে বোঝা হয়ে উঠে দরিদ্র পিতা মাতার  কাছে। এমন পরিস্থিতিতে  প্রতিবন্ধী নারীর মাথায় আসে বঙ্গবন্ধু কন্যা  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার  সরকারের – বিপদে  নিরাপদ আশ্রয়ের “মানবিক পুলিশ” এর কথা। তিনি শুনেছেন বর্তমান সরকার প্রত্যেক থানায় আলাদা     প্রতিবন্ধী, অসহায়  ও শিশুদের হেল্প ডেক্স করা হয়েছে সেখানে  পুলিশ অসহায় নির্যাতিত নারীদের পরম মমতায় আইনি সেবা প্রদান করেন। সাতপাঁচ না ভেবে  চলে আসেন থানায়। এবং

অফিসার ইনচার্জ পরম মমতায় নির্যাতিত শারীরিক প্রতিবন্ধী নারীর কথা গুলো শুনেন এবং তার খাওয়া-দাওয়াসহ সার্বিক বিষয়ে খোজখবর নিয়ে ওসি নিজেই প্রতিবন্ধী নারীকে সাথে নিয়ে  তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্হল তার স্বামীর বাড়িতে যান এবং  শ্বশুর-শ্বাশুরীসহ স্হানীয় গণ্যমাণ্য ব্যাক্তিদের নিয়ে আলোচনায় বসে  দীর্ঘ সময় তাদের কথা শুনেন এবং সকলকে বুঝান। এক পর্যায়ে অফিসার ইনচার্জ এর কথাগুলো শুনে  শ্বশুরবাড়ির ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা আপ্লুত হয়ে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টির হয়।এবং   উক্ত নারী ও তার শ্বাশুড়ীর মধ্যকার মান-অভিমান দূর হয়। তারা পরষ্পরকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। উক্ত নারীর স্বামী বাড়ীতে না থাকায় মোবাইল ফোনে কথা হয় এবং স্বামী তার ভুল বুঝতে পারে এবং ঘটনার পূণরাবৃত্তি হবে না মর্মে মোবাইল ফোনে উপস্হিত সকলের কাছে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।

নির্যাতিত নারী এসময়ে সকলের উপস্হিতিতেই  চিৎকার দিয়ে  কেঁদে উঠে” দুহাত তুলে দুয়া করতে শুরু করেন “আল্লাহ  তোমাদের ভালো করুক, আল্লাহ পুলিশের ভালো করুক” বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ  পুলিশ থাকবে জনতার পাশে  এ  শ্লোগানে  পঞ্চগড় জেলার  পুলিশ সুপার  তত্ত্বাবধানে ও সার্বিক নির্দেশনায় আটোয়ারী থানাসহ পঞ্চগড়ের সকল অফিসার ইনচার্জ এর নেতৃত্বে এ ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে  মানবিক পুলিশিংয়ের সেবা কার্যক্রম।