আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদীয় নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে নতুন করে শঙ্কায় সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকার মাঝিরা। দলীয় মনোনীতর প্রার্থী নাম ঘোষণার পর বেশিরভাগ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
গত রবিবার আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয় এর পর এই শঙ্কার সৃষ্টি হয় । চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে দুটিতে বর্তমান সংসদ সদস্যরা এবার নৌকা প্রতীক পাননি। নৌকা প্রতীক না পেয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন পটিয়া আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী বিচ্ছু চট্টগ্রাম নগরীর সিটি কর্পোরেশনের ( চসিকের) একাধিক কাউন্সিলর ও দুই উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নৌকাপ্রত্যাশী একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী। জানা যায়, তারা ব্যক্তিগত ইমেজের মধ্য দিয়ে স্বতন্ত্র প্রাপ্তি হিসেবে জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। গতকাল রাতে বন্দর এলাকায় কমিউনিটি সেন্টারে বড় সভা করে প্রার্থিতার ঘোষণা দেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা এবং ৩৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনকে। এতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ দলের শীর্ষ নেতা এবং দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম ১১ বন্দর পতেঙ্গা এ আসনে আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয় বার বার নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে। এ আসন থেকে ব্যক্তিগত ইমেজ নিয়ে ও জনগণের আস্থার উপর নির্ভর বিশ্বাস রেখে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জিয়াউল হক সুমন।
নির্বাচন বিষয়ে জিয়াউল হক সুমন বলেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবে। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী ও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো এবং গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিয়েছি।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ-বায়েজিদ আংশিক) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশী ছিলেন। এ আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ।
চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। সাবেক মেয়র মনজুর আলম মঞ্জুও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছেন। এছাড়াও মনোনয়নপত্র নিয়েছেন কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে এবার নৌকা প্রতীক পাননি বর্তমান সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। দলীয় প্রতীক না পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন হেভিওয়েট প্রার্থী সামশুল হক। গতকাল নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে প্রার্থিতার ঘোষণা দেন তিনি। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে যাচ্ছেন তিনি। জব্বার ও তার ভাই আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী নৌকা প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন ব্যবসায়ী এমএ মোতালেব। দলীয় প্রতীক না পেয়ে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভোটে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এ আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আলোচনার ঝড় তোলেন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এবার প্রার্থিতা পরিবর্তনের আশায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন ও সাবেক এমপি মরহুম সুলতানুল কবির চৌধুরীর ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মো. গালিব। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন। দু’জনই নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন অংশগ্রহণ করে বলে জানা যায়।