ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এর মামা – ভাগিনা পরিচয় দানকারী চার প্রতারক চক্রকে গ্রেফতার করেছে বন্দর থানা পুলিশ

এ যেন চোরের মার বড় গলা নিজেরা করে প্রতারণা  কার্ড ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর তাও আবার ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের নামে।  এরকম একটি প্রচার চক্রে গ্রেপ্তার করেছে  বন্দর থানা পুলিশ। 

একটি অভিযোগের ভিত্তিতে বন্দর  পুলিশ কলোনির কেয়ারটেকার ও ভাড়াটিয়ার ঝামেলা মেটাতে ঘটনা স্থলে যান। তখনই পুলিশের কাছে  ফোন এল কথিত ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের’।

এত ছোট বিষয়ে সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফোন করবেন? সন্দেহ হলো পুলিশের মনে। কথিত ব্রিগেডিয়ারের অবস্থান শনাক্ত ও মোবাইল নম্বর ট্রেকিং করে দেখা যায়, সেটি হারিফ নামে এক ব্যক্তির নামে  নিবন্ধন করা।বুঝা গেল  প্রতারণা করেছেন।

নগরীর বন্দর থানার দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের ৩৮ নং ওয়ার্ড  সাগরপাড় ধুমপাড়া এলাকায় এ ঘটনায় রোববার রাতে পুলিশ চার প্রতারককে  গ্রেপ্তার করে। যাদের মধ্যে দুই জন পরিচয় দিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের ভাই ও মামা হিসেবে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-ইয়ার হোসেন, মিলন খান মো. হারিফ মিয়া ও ইউসুফ মিয়া।

বন্দর থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা জানান, রোববার বিকালে সাগর পাড় ধুমপাড়া থেকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন আসে যে, একটি কলোনির কেয়ার টেকারের সঙ্গে ভাড়াটিয়ার ঝামেলা হচ্ছে।ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে সেখানে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাকে এক ব্যক্তি টেলিফোনে ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ পরিচয় দিয়ে হুমকি ধমকি দেয়া শুরু করে।

বিষয়টি আমাকে জানানোর পর মোবাইল নম্বর ট্রেকিং করে দেখা যায়, সেটি হারিফ নামে এক ব্যক্তির নামে নিবন্ধন করা। কিন্তু বাড়ির কেয়ারটেকার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এইচএম শফিকুল আলম নামে একটি ভিজিটিং কার্ড দেয়। সেই কার্ডে থাকা নম্বরগুলোও হারিফ চৌধুরীর নামে নিবন্ধিত।

তাদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে প্রতারণার বিষয়টি টের পাওয়া যায়। তখন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, বলেন ওসি।

বন্দর থানার এসআই কিশোর মজুমদার জানান, ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশ সদস্য ভাড়াটিয়ার ও কেয়ারটেকারের বক্তব্য শোনার সময় ছোটখাট গড়নের এক ব্যক্তি গিয়ে নিজেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের ছোট ভাই পরিচয় দেন এবং কথা বলে সেখান থেকে চলে যান।দুই পক্ষের সঙ্গে কথা চলার সময় কেয়ারটেকার মিলনের মোবাইলে একটি ফোন আসে। তখন তিনি সেটি দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে দিয়ে কথা বলতে বলেন।

এসআই কিশোর বলেন, “ফোনের অপরপ্রান্তের লোক মোবাইলে ঘটনাস্থলের পুলিশ কর্মকর্তাকে কেন সেখানে গিয়েছে জানতে চান। উত্তর দেওয়ার পরপরই ওই ব্যক্তি পুলিশ কমিশনার স্যারের নাম ধরে কথা বলেন এবং ঘটনা সেখানে নিষ্পত্তি করার চাপ দেন।

পুলিশ তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় কেয়ারটেকার মিলন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিকুল আলমের একটি ভিজিটিং কার্ড হাতে দেন।

এ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরিচয় দেয়া লোকটি ঘটনাস্থলে পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ির ঠিকানা জানতে চেয়ে সেখানে জেলা পুলিশ সুপারকে পাঠাবেন বলেও হুমকি দেয়া শুরু করে।

এসআই কিশোর জানান, ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশ সদস্য কলোনির কেয়ারটেকার ও ভাড়াটিয়া- দুই পক্ষকে থানায় গিয়ে বিষয়টি সমাধা করতে বললে তারা থানায় যান।

রাতে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলার সময় মিলনকে কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও উত্তেজিত হয়ে যান। তখন পুলিশ কর্মকর্তা কিশোর বলেন, যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল এবং কার্ডে থাকা দুটি নম্বরের লোকেশন এক স্থানে পাওয়া যায়। এরপর ধুমপাড়া মা কলোনির একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে হারিফকে আটক করা হয়।তার বাসায় ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ এইচএম শফিকুল আলম নামের ভিজিটিং কার্ড, কোস্ট গার্ডের আইডি কার্ড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী অধিদপ্তর ঢাকা ক্যান্টেনমেন্টের সেনা, নৌ, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর নাম উল্লেখ করা কিছু ফরম পাওয়া যায়।

ওসি সঞ্জয় সিনহা জানান, হারিফের কাছে যে ফরমগুলো পাওয়া গেছে সেখানে বিভিন্ন জনের নাম ও মোবাইল নম্বর লেখা আছে। সেগুলোতে যোগাযোগ করে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগের হারিফের বাড়ির কাছে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে।

এবং চক্রটি বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি দেয়ার কথা বলে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন হারিফ।

গেপ্তার হওয়া ইয়ার ও ইউসুফ নামে দুই জনের বিরুদ্ধেও আছে প্রতারণার অভিযোগ। তারা নিজেদের ব্রিগেডিয়ারের খালাত ভাই ও মামা পরিচয় দিতেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে পুলিশ বন্দর থানায় মামলা রুজু করে আসামিদের  আদালতে প্রেরণ করে।