চট্টগ্রাম নগরীতে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ ” আশ্রয়কেন্দ্রর! নামে পতিতালয় ‘ শ্রাবন্তীসহ বন্দর থানা পুলিশের হাতে আটক চার

চট্টগ্রাম আশ্রয় কেন্দ্রর! নামে পথশিশুদের এনে পতিতার কাজে  ব্যবহার করার এক আশ্রয় কেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।এ যেন কেঁচো খুড়তে সাপ পাওয়ার মতো!

চট্টগ্রাম নগরীর ইসহাক ডিপো এলাকায়  মা-বাবা হীন মেয়ে  পথশিশুদের আশ্রয় ও চাকরি  দেওয়ার নামে এনে যৌন নিপীড়ন ও অনৈতিক কাজে জোরপূর্বক  ব্যবহার করে এমন সংবাদ পাওয়া পর হিজড়া শ্রাবন্তী নিজস্ব আশ্রয় কেন্দ্র (পতিতালয়)  থেকে চার শিশু উদ্ধারসহ শ্রাবন্তীনামক এক আশ্রয় কেন্দ্র মালিক! ও তার চারসহযোগীকে আটক করেছে বন্দর থানা পুলিশ।

গত ২৯ মে সোমবার বন্দর থানা অফিসার ইনচার্জ জনাব সঞ্জয় কুমার সিনহার নেতৃত্বে, এসআই মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্সসহ  বন্দর থানাধীন ইছাক ডিপো টোলপ্লাজা সংলগ্ন বাইপাস রোডের পার্শ্বে একটি ভাসমান (আশ্রয় কেন্দ্র)  টিনের ঘরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে পুলিশ।

আটককৃতরা হলেন,  কুমিল্লা চান্দিনা থানার ভাগুরাপাড়ার কোরবান আলীর মেয়ে শ্রাবন্তী (৩৪) ও তার অপর চার সহযোগী  বশির আহম্মদের ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫) গাজীপুর শ্রীপুরের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে মোঃ আমির হোসেন (৩৫), ভোলা সদরের সিধু মাঝির ছেলে মোঃ জামাল (৫২), একই এলাকার ইয়াছিন ব্যাপারির মেয়ে মিতু আক্তার কাজল(১৯)।

চট্টগ্রাম নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করার সূত্র ধরে শ্রাবন্তী  বর্তমান  বন্দর থানা এছাক ডিপো সংলগ্ন টোল প্লাজা বাইপাস রোডের পার্শ্ব টিন সেট ঘর ভাড়া নিয়ে  অসহায় মেয়ের দিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র নাম করে পতিতার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো।

সে ইসহাক ডিপো এলাকায় হিজড়া শ্রাবন্তীর ও পতিতালয়ের মাস্টার নামে পরিচিত। শ্রাবন্তি এবং তার সহযোগীরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে অসহায় এতিম পথশিশুদের  লালন পালন ও চাকরি কথা বলেন তার নিজ টিন সেট  বাসা (পতিতার আশ্রয়স্থলে)  নিয়ে আসে। মা বাবা  হীন এ পথশিশুরা মন ভুলানো কথা শুনে একটু আশ্রয় ও নতুন জীবনের আশায় চলে আসে শ্রাবন্তী ও তার সহযোগীদের সাথে।

শ্রাবন্তীর “আশ্রয়স্থলে! আশ্রয় ও নতুন জীবন তো দূরের কথা  কোমলমতি মেয়ে শিশুদের জীবনে নেমে আসে জোরপূর্বক  যৌন নিপীড়নের মধ্যে দিয়ে জীবন সর্বনাশের বাস্তব অভিজ্ঞতা। যৌন কাজে সম্মতি না থাকলে  নেমে  আসে এ অবুঝ শিশুদের উপর হিজড়া শ্রাবন্তীর অমানবিক  শারীরিক মানসিক নির্যাতন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, ইসহাক ডিপো এলাকার এক ব্যাক্তি জানায়,শ্রাবন্তী হিজড়া কয়েক দিন পর পর ছোট ছোট মেয়েদের নিয়ে আসতে দেখি এবং রাতদিন তার ঘরে বিভিন্ন রকমের লোক জনের আসাযাওয়া রয়েছে। এলাকার লোকজন তাকে ভয়ে কিছু বলার সাহস পাই না। তার টিন সেট বাসার  মালিকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সে আশ্রয় কেন্দ্র নামে এ পতিতার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাসোহারা দেন এলাকার নামধারী কিছু নেতাকে। পতিতা ব্যবসার পাশাপাশি চলে মাদকের বানিজ্য। এসব অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে এই এলাকার স্কুল কলেজের ছাত্রসহ নষ্ট হচ্ছে যুব সমাজ। বন্দর থানা পুলিশের এ অভিযানে সচেতন ব্যক্তিসহ এবং  আমরা এলাকাবাসী সবাই খুশি।

সূত্রে জানা যায়,  চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস ব্রীজ, রেল স্টেশন এলাকা থেকে ১৩/১৪ বছরের মেয়েদের লালন পালনের কথা বলে নিয়ে আসে হিজড়া শ্রাবন্তীর পতিতালয়ে। সংবাদ পেয়ে বন্দর থানা পুলিশ শ্রাবন্তীর যৌন নিপীড়ন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে চার শিশুকে উদ্ধারসহ শ্রাবন্তী হিজড়া ও তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।

উদ্ধার কৃত  শিশুদের একজনের বয়স ১৩ বছর, অপর তিনজনের ১৪ বছর।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় সিনহা নিউজ ইনডিপেনডেন্ট. টিভিকে বলেন, সোমবার এক শিশুর সন্ধানে তার অভিভাবকরা আসে আমাদের থানায়। আমরা সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারি শিশুটি শ্রাবন্তী হিজড়ার তত্বাবধানে আছে। কিন্তু আমরা সেই শিশুকে উদ্ধার করতে গিয়ে সন্ধানে পাই শ্রাবন্তীর মিনি পতিতালয়ের থেকে  ভিকটিম ওই শিশুসহ মোট চার শিশুকে আমরা উদ্ধার করেছি এবং শ্রাবন্তী হিজড়ার সঙ্গে আটক করি তার চার সহযোগীকে।

ওসি সঞ্জয় সিনহা আরও বলেন, আটককৃত শ্রাবন্তীসহ সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৬(২)/৭/১০(১) ধারায় মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।