মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে – ১৪৮ টি মোবাইল সহ ডিএসএলার ক্যামেরা উদ্ধার

নগরীর সিএমপি পুলিশের অভিযানে মোবাইল ফোন চোরচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি পশ্চিম) পুলিশ।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৪৮টি চোরাই মোবাইল ফোন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইএমইআ পরিবর্তনের সরঞ্জাম এবং দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নগরীর সিআরবি এলাকায় অভিযান চালায় ডিবি পশ্চিমের একটি বিশেষ টিম। অভিযানে গ্রেপ্তার হয় মো. সোহেল (৩০), সাগর (২২) ও শাহাদাত হোসেন (২৫) নামে তিনজন। ওরা দীর্ঘদিন ধরে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিনতাই ও চুরি হওয়া মোবাইল ফোন সংগ্রহ করে বিশেষ চক্রের মাধ্যমে বিক্রি করছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ জানায়, চক্রটি চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন সংগ্রহ করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করত। এরপর নতুন নম্বর বসিয়ে সেটগুলো বৈধ মোবাইলের মতো সাজিয়ে বাজারজাত করত। শুধু তাই নয়, তারা আইএমইআই ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে একই সঙ্গে একাধিক ফোন চালানোর কৌশলও ব্যবহার করত।

গ্রেপ্তার সোহেলের নেতৃত্বে এই চক্রের সঙ্গে নগরের বিভিন্ন এলাকার অসাধু মোবাইল ব্যবসায়ীদের যোগসাজস রয়েছে। তারা নামীদামি ব্র্যান্ডের সর্বশেষ মডেলের ফোন কম দামে সরবরাহ করত।

ডিবি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া ১৪৮টি মোবাইল ফোনের মধ্যে রয়েছে স্যামসাং, আইফোন, ভিভো, রিয়েলমি, রেডমি, অপো, টেকনো, হোনর, ইনফিনিক্স, ওয়ালটন, ওয়ানপ্লাস, মোটোরোলাসহ জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেল। এগুলোর অনেকগুলোর আইএমইআই নম্বর ঘষে ফেলা বা পরিবর্তন করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ফোনের বক্স, চার্জার ও অন্যান্য সরঞ্জামও জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া চক্রটির কাছ থেকে দুটি বিদেশি ডিএসএলআর ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়।

উপ–পুলিশ কমিশনার (ডিবি পশ্চিম) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি হওয়া মোবাইল বাজারজাত করছিল। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আইএমইআই পরিবর্তন করত, যাতে আসল মালিকরা ফোন ট্র্যাক করতে না পারে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তিনি বলেন, মোবাইল ফোন কেনার সময় সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। অস্বাভাবিক কম দামে কোনো ফোন কিনতে গেলে আগে অবশ্যই সেটির বৈধ কাগজপত্র ও আইএমইআই যাচাই করতে হবে। অন্যথায় যে কেউ আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন। গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা (নং ৩৬, তারিখ ২৩/০৯/২০২৫, ধারা–৪১৩/৪১৪ পেনাল কোড) দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে এবং চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

পুলিশ বলেছে, যে কেউ চুরি বা ছিনতাইয়ের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর জানাতে হবে। উদ্ধার হওয়া মোবাইল সেট মালিকানা প্রমাণপত্র (রশিদ, বক্স, সিম রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি) যাচাই শেষে ফেরত দেওয়া হবে। চোরাই বা আইএমইআই পরিবর্তিত মোবাইল কেনাবেচা দণ্ডনীয় অপরাধ।

উদ্ধার করা মোবাইল ফোন আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে প্রকৃত মালিককে ফেরত প্রদান করা হবে। এ সংক্রান্তে প্রকৃত মালিকগণ আগামী ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর মহানগর গোয়েন্দা (বন্দর) বিভাগে (মনসুরাবাদ) পুলিশ লাইন্সে মালিকানার সঠিক ডকুমেন্ট, পাসওয়ার্ড/ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ডিবি (বন্দর) কার্যালয়ে রক্ষিত নির্দিষ্ট ফরমে আদালত বরাবর আবেদন করতে হবে। এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা (বন্দর) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক ধীমান মজুমদার (মোবাইল ০১৮১৬৬১২৫৬৬) এবং এসআই মোহাম্মদ ইমাম হোসেনের (০১৭১১–৪৬১৮৯৭) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।