গতকাল দশমী তিথিতে দেবীকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার। আগামী বছরের অপেক্ষায় থেকে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে দেবালয়ে বিদায় জানালেন ।
গতকাল রবিবার প্রতিমা বিসর্জনের আগে সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হয় দশমীর পূজা–অর্চনা। সকাল ৬টা ৩০ মিনিটের মধ্যে শুরু হয় দশমীবিহিত পূজা। পূজা শেষে ভক্তরা ভক্তি–শ্রদ্ধার্ঘ দিয়ে দুর্গা মায়ের চরণে শেষবারের মতো প্রণাম জানিয়ে আর্শীবাদ গ্রহণসহ শান্তির জল গ্রহণ করেন। পূজা শেষে দেওয়া হয় দর্পণ বিসর্জন। এসময় পরম ভক্তি নিয়ে নিজ নিজ মনের বাসনা জানিয়ে দেবীর পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ান নারীরা। লাল রঙকে শক্তির প্রতীক হিসেবে মনে করে নারীরা একে অপরের মাথায় সিঁদুর ছোঁয়ান। দীর্ঘায়ু কামনা করেন পরিবারের সদস্যদের। সধবা নারীরা বিসর্জনের জন্য দেবীকে সাজান ফুল, সিঁদুর ও নানা অলঙ্কার দিয়ে। পুরোহিতরা দেবীর জন্য সাজান সিদ্ধ চালের নৈবেদ্য, কচু–ঘেচু আর শাপলা দিয়ে। এরপর শেষ মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হয় দেবীকে। মণ্ডপে–মণ্ডপে হিন্দু সমপ্রদায়ের মানুষ একে অপরের সঙ্গে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এরপর নগরীর প্রতিটি পূজা মণ্ডপ থেকে ট্রাকের সারিতে করে ধুনচি নাচ, ঢাকের বাদ্যে নেচে–গেয়ে প্রতিমা বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় দুপুরের পর থেকে একে একে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়।
শারদীয় দুর্গোৎসবে বিজয়া দশমীর দিনটি ভক্তদের কাছে একদিকে যেমন উৎসবের, তেমনি বেদনারও। দোলায় চেপে দুর্গা এসেছিলেন মর্ত্যলোকে, আর ঘোটকে চড়ে দেবী ফিরে গেলেন কৈলাসে। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। মহালয়ার মধ্য দিয়ে ২ অক্টোবর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। এরপর গত বুধবার ষষ্ঠী থেকে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, গতকাল প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। আবারও মঙ্গলবার্তা নিয়ে আগামী বছর যেন দেবী দুর্গা আগমন করেন, বিসর্জনকালে সেই প্রার্থনা করেন ভক্তরা।






